প্রকাশিত: ৩০/০৫/২০১৬ ৮:১৪ এএম

el-Nirbachani-Shahingshata-01-640x360-1-550x296শিমুল : চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে চলছে লাশের মিছিল। তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় এ তা-বলীলা। শনিবার পঞ্চম ধাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ১১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় নয় হাজার। এসব সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের হিসাব-নিকাশ। বেশিরভাগ জায়গায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে নেপথ্যে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। এর ফলে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ঠেকাতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সংঘাত-সহিংসতা উসকে দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ও প্রভাবশালীদের এই সংঘাত মোকাবেলায় আইনশৃংখলা বাহিনীকে চরম হিমশিম খেতে হয়। অনেক স্থানে পুলিশ হয়তো কোনো ভূমিকা রাখেনি, নতুবা রাখতে দেয়া হয়নি। এর ফলশ্র“তিতে এত প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও অনেক নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার জন্য এলাকাবাসী ও সচেতন মহল নির্বাচন কমিশন ও সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে দায়ী করেন। তারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যানরা ভোটে জিতে আসার ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করাসহ অনেক ভূমিকা রাখতে পারেন। এ ছাড়া অধিকাংশ স্থানে সরকারি দলের উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মধ্যে প্রকাশ্যে ও আড়ালে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ভবিষ্যতে এমপি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে পারেন। এসব কারণে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দমিয়ে রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানদের হাতে রাখতে চান এমপি। এ রকম নানা হিসাব-নিকাশ থেকেই চলমান ইউপি নির্বাচনে এমপিরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে তাকে জিতিয়ে আনতে সব চেষ্টা করেছেন। যেখানে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেননি সেখানে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। আর এমপির প্রার্থী বলে কথা, যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে বেশিরভাগ স্থানে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যাই বেশি। কয়েকটি স্থানে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের এবং দু-তিন জায়গায় বিএনপির দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে কয়েকজন মারা যান। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে অনেক স্থানে আইনশৃংখলা বাহিনী গুলি করতে বাধ্য হয়। অনেক এলাকায় মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষেও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। মেম্বার প্রার্থীরা নির্দলীয় হলেও এদের পেছনেও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে মন্দ নির্বাচন। ব্যাপক অনিয়ম আর রক্তক্ষয় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নির্বাচনের আগে-পরে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন প্রায় ৭৯ জন। আর প্রথম ধাপে ১২, দ্বিতীয় ধাপে ৯, তৃতীয় ধাপে ১, চতুর্থ ধাপে ৬ ও পঞ্চম ধাপে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। ইউপি নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অতীতের নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ১৯৮৮ সালে। ওই নির্বাচনে ৮০ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। তবে সংঘাত-সহিংসতা, রক্তপাত ও মৃত্যুর ঘটনায় এবারের নির্বাচন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। জাল ভোট প্রদান, প্রকাশ্যে সিল মারা ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ ভোট কারচুপির ক্ষেত্রেও একই খেতাব অর্জন করেছে।

কেস স্টাডি : ১. জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠারচর ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাকিরুজ্জামান রাখাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট দেয়া নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়। শনিবার রাতে আহতাবস্থায় আরও একজন মারা যায়। আওয়ামী লীগের দুই গ্র“পের কোন্দলেই এই হত্যাকা- ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাখাল উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সমর্থক। আজাদ আবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীর গ্র“প করেন। এরা সবাই জেলার প্রভাবশালী বলে খ্যাত পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। শাহজাহান মিয়া পারিবারিকভাবে এলাকায় প্রভাবশালী। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষও তাকে সহযোগিতা করছে। শাহজাহান মিয়া যাতে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন সে জন্যই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- চালানো হয়।

নিহত মাজেদের চাচা কালাম ও বোন কানন যুগান্তরকে বলেন, রাখাল পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- চালিয়েছে। তিনি (রাখাল) নিজেই গুলি চালিয়েছেন বলে দাবি তাদের।

জানতে চাইলে মির্জা আজম এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অন্য এলাকা তো দূরের কথা নিজের নির্বাচনী এলাকাতেও এসব বিষয়ে মাথা ঘামান না। সবাই দলের লোক। কেউ চাইলে সাংগঠনিকভাবে সাহায্য করেন। কিন্তু কোনো ভাবেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন না। দেওয়ানগঞ্জের এ ঘটনা স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সংগঠনের দূরত্বের ফল হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(২) মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হোসেন্দি ইউপিতে ২৪ মে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল হক মিঠু ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহবুবুল হক মজনুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা হানিফ মারা যান। হানিফ মিঠুর সমর্থক বলে পরিচিত।

জানা গেছে, গজারিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস তার আধিপত্য বজায় রাখতে নিজ সমর্থকদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাইয়ে দেন। অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীকে তিনি বাদ দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। হোসেন্দি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মজনুকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রে হস্তক্ষেপ করে মিঠুকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেন স্থানীয় এমপি। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রেফাতউল্লাহ খান তোতা। সংসদ সদস্যের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মজনুকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান তিনি। তোতা সমর্থক ও এমপির বিরোধীরা মজনুর পক্ষে মাঠে নামে। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শেষ মুহূর্তে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হানিফ মারা যায়। ওই ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

(৩) মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার সাহেব রামপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল মোল্লার সমর্থক কালু শিকদার নিহত হন ৪ মে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম সরদারের সমর্থকরা এ হত্যাকা- ঘটায়। কালু শিকদারের স্ত্রী রোজিনা আক্তার দাবি করেন, ‘আমার স্বামী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন। সেলিম সরদারের লোকজন তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলে।’

জানা গেছে, কালকিনিতে দীর্ঘদিন ধরে একক আধিপত্য ছিল সাবেক যোগযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের। কিন্তু মন্ত্রীর পদ হারানোর পর এলাকায়ও তার অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবুল হোসেনের পরিবর্তে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের টিকিটে কালকিনি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন তার পক্ষে অবস্থান নিতে থাকে। এই দু’জনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপও এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন। রামপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নাছিম সমর্থক বলে পরিচিত সেলিম সরদার। কিন্তু আবুল হোসেন তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি জামাল মোল্লাকে পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড় করান। তবে শেষ পর্যন্ত সাবেক এবং বর্তমান এমপির আধিপত্যে বিস্তারের গোপন দ্বন্দ্বে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারাতে হয় কালু শিকদারকে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যে দুঃখজনক ঘটনাটা ঘটেছে সেই পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে তিনি আজ (রোববার) সন্ধ্যায় সেই গ্রামে যাচ্ছেন।

তার মতে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যাতে যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি কেন ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা এলাকার মানুষ দেখেছে। আমি কিছু বলব না। তিনি জানান, অনেকের নানা রকম আগ্রহ-আকাক্সক্ষা থাকতে পারে, সেই লক্ষ্যেই সবাই রাজনীতি করে। আমি শুধু অনুরোধ করব, জনগণ যেন জিম্মি না হয়।

(৪) বরিশাল বিভাগের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাসানচর ইউপিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সমীর চারু মারা যান। ওই ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার আধিপত্য ধরে রাখতেই তিনি এই কৌশলের আশ্রয় নেন। তার ইন্ধনেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন বিদ্রোহী প্রার্থী।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এমপি পংকজ দেবনাথ বলেন, কারা এ ঘটনার ইন্ধনদাতা, কারা খুনি সেটা বোঝা যাবে খুনের বেনিফিশিয়ারি কারা সে হিসাবটা করলেই। নিহত সমীর চারু তার দুঃসময়ের কর্মী উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।

(৫) পটুয়াখালীর বাউফলে আদাবাড়িয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আশরাফ ফকির নিহত হন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ নিজ বলয় ধরে রাখতে তার সমর্থকদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেন। তৃণমূলের মতামত কার পক্ষে ছিল তা কেউ কখনও জানতে পারেনি। ফিরোজ যাদের কথা বলেছেন তারাই মনোনয়ন পান। ফিরোজের কথার বাইরে যারা নির্বাচন করেছেন তাদের পড়তে হয় হুমকি আর নির্যাতনের মুখে। আদাবাড়িয়া ইউপিতে সংঘর্ষের পেছনেও তার ইন্ধন ছিল বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।

(৬) দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন এক হোটেল বয় ও একজন ভ্যানগাড়িচালক। ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে পরাজিত হওয়ার আশংকায় কেন্দ্র দখল করে ভোট নেয়ার চেষ্টা করছিলেন সন্দ্বীপের সরকারদলীয় এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার ভাই বাউরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী জিল্লুর রহমান। দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। আর নিজের ভাইকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন এমপি নিজেই। দু’জনের প্রাণহানি হলেও শেষ পর্যন্ত এ ইউনিয়নে সংসদ সদস্য মিতার ভাই জিল্লুর রহমান পরাজিত হন। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সরকারদলীয় প্রার্থী ও সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন। জানা গেছে, নির্বাচনের দিন যখন এমপি বুঝতে পারেন তার ভাই নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে তখনই তার ক্যাডারদের লেলিয়ে দেন ভোট কেন্দ্রে। বাউরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চরবাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে মিতার লোকজন ওই কেন্দ্র দখলে ঢুকে পড়েন। ব্যালট ও ভোটের বাক্স ছিনতাই করার চেষ্টা চালান। এ সময় বাধা দিতে গেলে এলোপাতাড়ি গুলি করেন জিল্লুর রহমানের লোকজন। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় নিহত হন ভ্যানগাড়িচালক ইব্রাহিম ও হোটেল বয় সানাউল্লাহ। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও অন্তত ৭ জন। অভিযোগ আছে, মূলত এমপির প্রভাব তথা নিজের ভাইকে জেতানোর জন্য কেন্দ্র দখলের ফন্দি আঁটা ও দখল চেষ্টার কারণেই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। অকালে ঝরে যায় দুই নিরীহ প্রাণ। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য মোবাইল ফোনে চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

(৭) রাজশাহীর বাগমারার হাটগাঙ্গোপাড়ায় ৭ মে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেকার সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গুলিবর্ষণ করেন। এতে নিহত হন আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী। এ ঘটনায় বিবদমান পক্ষগুলো পরস্পরকে দায়ী করলেও মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই মূলত সংঘর্ষ থেকে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। আর এজন্য সময়মতো স্থানীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পদক্ষেপ না নেয়াকেই দায়ী করেন বিদ্রোহী প্রার্থী।

এদিকে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকে। উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুজ্জামানের নিজ এলাকা হাটগাঙ্গোপাড়ায় বিক্ষোভ করতে যান। এ সময় তাদের প্রতিরোধ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদের সমর্থকরা। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশও গুলি চালায়। এ ঘটনায় ৪ নেতাকর্মী নিহত হয়।

এ প্রাণহানির ঘটনা সম্পর্কে বাগমারা তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘৪ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার এ দুঃখজনক ঘটনার জন্য এমপি সাহেবই দায়ী। কারণ তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে এমন প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন যারা এক সময় সরাসরি নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা এসব জেএমবি সদস্যদের পক্ষে মাঠে নামতে পারেননি। তারা এসব দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীদের ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। এ কারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

অভিযোগের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বক্তব্য জানার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কল রিসিভ না করায় ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

(৮) এমপির প্রভাবের বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায়। থানার তিনটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেন্দ্রে অভিযোগ করেন, তৃণমূল মনোনয়ন না নিয়েই দলে সদ্য যোগদানকারীদের মনোনয়নের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন। টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান, ছানিয়াজানি ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল গফুর এবং ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের সভাপতি রেজ্জাকুল ইসলাম মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এর মধ্যে টংভাঙ্গা ও ছানিয়াজানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এ বছরই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেয়া সেলিম হোসেন ও হাশেম তালুকদার। এ তিনটি ঘটনায় থানা ও জেলা পর্যায়ে একাধিক মিছিল ও মানববন্ধন হয়।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

(৯) খুলনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপির আধিপত্য ধরে রাখা এবং মনোনয়ন বাণিজ্যে তাদের সুপারিশে ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, দিঘলিয়া ও তেরখাদাসহ বেশকিছু উপজেলার ইউপি নির্বাচনে হাইব্রিড নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এসব এলাকায় প্রার্থিতা নির্ধারণে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষ অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল পর্যন্ত করে। এ নিয়ে জেলার বটিয়াঘাটাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। মোস্তফা রশিদী সুজার বিরুদ্ধে রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আনেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ডুমুরিয়ায় সভা করে দলীয় প্রার্থীকে বয়কটও করা হয়।

(১০) ২০ মে সাভারের কাউন্দিয়া ইউপিতে শহিদুল্লাহ নামে একজন মারা যান। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল আলম খান একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শান্ত খানের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি মারা যান। বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল আলম আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেন। সাইফুল আলম এলাকায় নিজেই বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রানা প্লাজা ঘটনায় মুরাদ জংয়ের প্রভাব শেষ হওয়ার পর তিনি ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের দুই সংসদ সদস্যর সঙ্গেও গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাদের ইন্ধনে সাইফুল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। যুগান্তর

পাঠকের মতামত

নির্বাচন কমিশন গঠন, নতুন সিইসি কক্সবাজারের সন্তান সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সন্তান অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ ...